২১শে আগস্ট: চট্টগ্রাম থেকে নারী কাউন্সিলর ছিলাম আমিই!

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন বায়েজিদ থানা আওয়ামী লীগের মহিলা সম্পাদিকা ফেরদৌস বেগম মুন্নী। তিনি ২০০০ সালে থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত লাগাতার তিনবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী ইসমাইলের হাত ধরে তার রাজনীতিতে আসা। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে ফরম জমা দিলেন মুন্নী।

এসময় আওয়ামী লীগের সাথে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তুলে ধরেন ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় স্বচক্ষে দেখা বিভীষিকার চিত্র। সেদিন অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছিলেন চট্টগ্রাম থেকে সমাবেশে অংশ নেওয়া কাউন্সিলর মুন্নী।

তিনি স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেছেন, নেত্রী ডাক দিয়েছেন ঢাকায় পার্টি অফিসের সামনে সমাবেশ হবে। তার আগের দিন ট্রেনে যাওয়া ইচ্ছে খাকলেও টিকিট না পাওয়ায় যেতে পারিনি। তাই সমাবেশের দিন শনিবার (২১ আগস্ট) ভোরেই বাসে করে ঢাকা পাড়ি দিই। দুপুরে আগে পৌঁছানোর পর ভাত খেয়ে সোজা পার্টি অফিসের সামনে। সারাদেশের নারী কাউন্সিলরদের ডাক পড়েছিল ওই সমাবেশে হাজির হতে। চট্টগ্রাম থেকে শুধুমাত্র আমি গিয়েছিলাম সেদিনের সমাবেশে। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের তৎকালিন নারী কাউন্সিলর সীমা আর আমি পাশাপাশি দাঁড়িয়ে নেত্রীর ভাষণ শোনছিলাম, ঠিক তখনই একের পর একে গ্রেনেডের শব্দ। মুহূর্তেই সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। চোখে মুখে নেমে আসে অন্ধকার। পাশের কয়েকজন গ্রেনেডের আঘাতে আহত হলেও ভাগ্যক্রমে সেদিন আমি বেঁচে যায়। না হলে সেদিন পাশের মানুষের জায়গায় আমিই আহত হতাম। যদি সীমা আপুর পাশে না দাড়াইতাম।

তিনি আরও বলেন, সেদিন বিকাল ৫টার দিকে ট্রাকের উপর করা মঞ্চে সবার বক্তব্য শেষে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য দিচ্ছিলেন। মন দিয়ে শোনছিলাম নেত্রীর নির্দেশনাগুলো। বক্তব্য শেষে ঘোষণা দিলেন বিক্ষোভ মিছিল হবে। নামতে গিয়ে ক্ষাণিক থামলেন। তার পরের মুহুর্তেই বিকট আওয়াজ আর চারদিকে সবার ছুটাছুটিতে ধাক্কা খেয়ে পরে গেলাম। উঠে দেখি চারপাশে লাশ আর রক্তের ছিটাছিটি মিশে একাকার হয়ে গেছে। ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করে দেখি কোনো নেটওয়ার্ক নেই। তৎকালীন স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতক সরকার ঘটনাস্থলে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিয়েছে। তখন চোখে ভাসছিল আমার দুই সন্তারের চেহারাগুলো। নিজেকে সামলে নিয়ে শরিক হলাম আহতদের হাসপাতালে এগিয়ে দিতে।

ততক্ষণে প্রায় অন্ধকার নেমে এসেছে। শুনেছি অনেক নেতা-কর্মী মারা গেলেও নেত্রী সুস্থ আছেন। আহতদের হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। তখন পুরো ঢাকার বুক মানুষ আর গাড়ি শূন্য হয়ে পড়েছে। রাতে চট্টগ্রামে ফেরার ইচ্ছা থাকলেও গাড়ির না পেয়ে ফিরতে পারিনি। রাতে হোটেলে থেকে পরেরদিন সকালেই বাড়ি ফিরি। সেদিন আমারও করুণ পরিণতি হতে পারতো। ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে মানুষ মারার রাজনীতি বিভীষিকা দেখেছিলাম সেদিনের সমাবেশে। না থাকলে হয়ত কখনও জানা হত না, মানুষ এত প্রতিহিংসা পরায়ণ হতে পারে!

সেদিন তো বেঁচে গিয়েছিলাম। বিএনপি সরকরারের আমলে আওয়ামী লীগ থেকে মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ায়, আমার প্রতি জামাতি সন্ত্রীদের আক্রোশ কখনও কমতি ছিল না। ২০০৭ সালে নেত্রী যখন জেলে, তখন আমরা মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধনে অংশ নিতাম। আমি কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলাম চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ পাহাড়তলী, ২ নম্বর জালালাবাদ ও ৩ নম্বর পাঁচলাইশ থেকে। তবে আমার বাড়ি ২ নম্বর ওয়ার্ডের অক্সিজেন এলাকায়। যে এলাকাটা জামায়তিদের অভয়ারণ্য ছিল। তখন জামায়তিদের লেডী সন্ত্রাসী তামান্না খাতুনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বাঁধা দেওয়ায় প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিয়েছিল। তামান্না ছিল চট্টগ্রামের এইট মার্ডার মামলার আসামি সাজ্জাদের আপন ফুফু। তামান্নাদের থাবা থেকে মুক্ত আজকের বায়েজিদ। তবে আমরা কি হারিয়ে যাবো?

প্রসঙ্গত, আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়েছেন ফেরদৌস বেগম মুন্নী। ২০০০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন মুন্নী। বিএনপি জোট সরকার যখন ক্ষমতায় তখন আওয়ামী লীগের কথা বলার মতো কোন লোকই পাওয়া যাচ্ছে না, তখনই তিনি মুক্তিযুদ্ধ ও মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করেছেন। নির্বাচন করে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন তিনি। এবার দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। আশাবাদী দলের দুর্দিনে কাজ করার উপহার স্বরূপ দল মূল্যায়ন করবে এবার।

 

 

 

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন